আদমশুমারী যদি জন শুমারী হতে পারে, তবে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় নাম রাখা হবে না কেন!আমার মনে এমন একটি প্রশ্ন জেগেছে। প্রশ্নটির উৎস পরিসংখ্যান আইন ২০১৩।
Population Census মানে আদম শুমারী। আজীবন শুনে আসছি।এখন বলা হয় জন শুমারী।দশ বছর পর পর জনশুমারী করার পরিকল্পনায় আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশে জন শুমারী নামে লোকসংখ্যা গণনা করা হবে।২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ পাশ হওয়ায় আদমশুমারীকে জন শুমারী বলতে হবে।
তাহলে আমরা কি বাংলাদেশে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় করার প্রস্তাব করতে পারি না? আর শিশুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয়ের কথা কি ভাবতে পারি না! কান টানলে মাথা আসার মতো—নারীর সাথে শিশু জুড়ে দিই। শিশুর সাথে নারীকে জুড়ে দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজ নারীকে ভার দিয়ে পুরুষকে নির্ভার, মুক্ত ও দায়িত্বহীন রাখে।আইনে কিন্তু বাবার সাথে শিশু। শিশুর অধিকার, অভিভাবকত্ব বাবার।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০। এখানে নারীকে স্বপরিচয় নারী হিসেবে দেখালেও শিশুর মতোই অসহায় জীব হিসেবেই গণ্য করে তাদের নির্যাতনকে একই ছাতার নিচে আনা হয়েছে।একই ফাইলে---- একই কাগজে রাখা হয়েছে।
অবশ্য জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ তে নিদেন পক্ষে শিশু যুক্ত করেনি।
যাহোক, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। এটিকে অনায়াসে নারী বিষয়ক অধিদপ্তর ঘোষণা করা যায়।
নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী মন্ত্রী(মহিলা মন্ত্রী না হয়ে) বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন! মহিলা তো একটি অসংস্কৃত শব্দ বলে মনে হয়।
নারী শব্দের পুংলিঙ্গ পুরুষ। মহিলা শব্দের পুংলিঙ্গও পুরুষ।নর বলা হয় না।অথচ নারী শব্দের অনেক সমার্থক শব্দ ব্যবহার করা হয়। তুচ্ছার্থে। অবমাননায়।ব্যাঙ্গার্থে, তথাকথিত প্রেমার্থে। ক্ষমার্থে। তৃষ্ণার্থে।
লোভার্থে। কামনার্থে। স্নেহার্থে। তথাকথিত সম্মানার্থে। ধর্ষণার্থে, জিনার্থে। আরও নানাবিধ অর্থে। আমরা নারীকে নারী হিসেবে দেখতে চাই।চিনতে চাই। পরিচয় চাই।
এখানে আমার একজন অপ্রিয় ব্যক্তির প্রিয় কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দিতে চাই। ফরহাদ মাজহারের কবিতা--- ‘’কর্তৃত্ব গ্রহণ কর, নারী’’-----
“আমি পুরুষ
আমাকে ক্ষমা কর।
তুমি প্রজননযন্ত্র তাই তোমার নাম জননী
তুমি রমণযোগ্য তাই তোমার নাম রমণী
ঘোড়াশালে ঘোড়া হাতিশালে হাতির মতো মহলে মহলে থাকো
তাই তোমার নাম মহিলা
গৃহে গৃহে আসবাবপত্রের মত শোভা পাও
তাই তোমার নাম গৃহিণী
আমি পুরুষ শব্দের সমান অর্থবহ উচ্চারণে,
তোমার নামকরণ করতে চাই, নারী
কিন্তু পারি না
অক্ষম লজ্জায় আমি তোমার সামনে
অপরাধীর মত দাঁড়িয়ে আছি
আমি পুরুষ
আমাকে ক্ষমা কর।
আজ আমি তোমাকে বলতে এসেছি
পুরুষ শব্দের অর্থ হচ্ছে কর্তৃত্ব
এবং তোমার কর্তৃত্ব গ্রহণ করার সময় হয়েছে, নারী
পুরুষকে গ্রহণ কর।’’
হরিশ্চন্দ্র রাজাকে নাকি প্রশ্ন করা হয়েছিল--- পাঁচজন পন্ডিত নিয়ে পাতালে থাকবেন, না একশ জন মূর্খ নিয়ে স্বর্গে থাকবেন? হরিশ্চন্দ্র রাজা একশ জন মূর্খ নিয়ে স্বর্গে থাকতে রাজি হননি। পরে কোথায় গিয়েছিলেন জানি না। এটাকে অন্যভাবে বলা যায়---- আমি মনে করি পাঁচ জন জেন্ডার অসংবেদনশীল মানুষ নিয়ে নারীর স্বর্গে যে অবস্থা ও অবস্থান হবে এর চেয়ে অযুত গুণ আনন্দময় সুখের জীবনযাপন হবে যদি একজন জেন্ডার সংবেদনশীল মানুষও মর্ত্যে নারীর পাশে থাকে। কিন্তু আমাদের এ পুরুষশাসিত সমাজ কাঠামোতে জৈবিক পরিচয়ে নারী হয়ে জন্মগ্রহণ করা অনেক মানুষ সামাজিকীকরণের শিকার হয়ে পুরুষ শাসিত মনোভাবে পুষ্ট। পৃথিবীতেই নারীর জন্য স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টিতে জেন্ডার সংবেদনশীলতার বিকল্প নেই।
ভাষায় লিঙ্গ বৈষম্য বিলোপ জেন্ডার সংবেদনশীলতার একটি দিক।
কাজেই ভাষায় লিঙ্গ বৈষম্য ঘোচানো এক ধরণের আন্দোলন।নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আন্দোলন।নারী আন্দোলন।নারী মুক্তি আন্দোলন।